মহাকাশ অভিযান
মহাকাশ অভিযান হচ্ছে মহাশূন্যের রহস্য আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে মহাশূন্যে চালিত অনুসন্ধান বা অভিযান। সাধারণত মানব ও
রোবটচালিত মহাকাশযানের মাধ্যমে এই অনুসন্ধান চালানো হয়। মহাকাশচারীসহ কিংবা মহাকাশচারী ছাড়াই কোনো
মহাকাশযান যখন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাঁধন কাটিয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে একশত কিলোমিটার উপরে বায়ুমন্ডলের
বাহিরে যায় আমরা সেটাকে মহাকাশ অভিযান বলে থাকি। মহাকাশ অভিযান স¤পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাঃ
৩ অক্টোবর ১৯৪২: জার্মান বিজ্ঞানীরা পরীক্ষামূলকভাবে সর্বপ্রথম মহাশূন্যে রকেট "ভি-২" পাঠান।
৪ অক্টোবর ১৯৫৭: সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্বপ্রথম উপগ্রহ ”স্পুটনিক-১” মহাশূন্যে প্রেরন করেন
১২ এপ্রিল ১৯৬১: ”ভস্টক-১” এ করে সর্বপ্রথম মানুষ হিসেবে ২৭ বছর বয়সী রাশিয়ান মহাকাশযাত্রী ইউরি গ্যাগারিন মহাশূন্যে ভ্রমণ করেন।
১৬ জানুয়ারি ১৯৬৩: বিশ্বের প্রথম মহিলো। হিসেবে ভেলেনটিনা তেরেসকোভা ”ভস্টক-৬” এ করে ৪৮ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে
২০ জুলাই ১৯৬৯: সর্বপ্রথম মানুষ চাঁদে অবতরণ করেন। "এপোলো-১১" তে করে সর্বপ্রথম নিল আমস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন চাঁদে অবতরণ করেন।
২ ডিসেম্বর ১৯৭১: মঙ্গলগ্রহে প্রথম রকেট মার্স-৩ অবতরণ করা হয়
১২ এপ্রিল ১৯৮১ : প্রথম স্পেস শাটল উৎক্ষেপণ করা হয়
মহাকাশ অভিযান করার জন্য একটি মহাকাশযানকে ঘণ্টায় প্রায় তিরিশ হাজার মাইল গতিবেগ অর্জন করতে হয় যেটি
শব্দের গতিবেগ থেকে প্রায় আটগুণ বেশি। এর জন্য একাধিক রকেটকে নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। মহাকাশচারীসহ
একটি মহাকাশযানকে অবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে হলে এই প্রচণ্ড গতিবেগে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় বাতাসের
ঘর্ষণে সৃষ্ট তাপকে বিকিরণ করে তার গতিবেগ আবার সহনশীল পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে হয়।এই পুরো প্রক্রিয়াটি সফলভাবে
স¤পন্ন করার জন্য বিজ্ঞানীদের দীর্ঘকাল গবেষণা করতে হয়েছে। মহাকাশযানের গতিপথ বের করার জন্য, তার অসংখ্য
যন্ত্রপাতি নিখুঁতভাবে পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং সর্বক্ষণ পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য তথ্য ও
যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়।
মহাকাশ প্রযুক্তির বিকাশ হওয়ার পর অসংখ্য স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে । এর মাঝে
উলেখযোগ্য একধরনের স্যাটেলাইটকে বলে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩৪০০০
কিলামিটার উপরে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে মিল রেখে হুবহু একই গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, তাই জিওস্টেশনারি
স্যাটেলাইটকে পৃথিবী থেকে আকাশে একজায়গায় স্থির হয়ে আছে বলে মনে হয়। টেলিকমিউনিকেশনে ব্যবহার করার জন্য
এটি প্রথম আবশ্যকীয় শর্ত । বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-১ নামে যে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে স্থাপন করে বিশ্বের ৫৭ তম দেশ
হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিকানা অর্জন করেছে , সেটি একটি জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট ।
ব্যবহার (Application):
বর্তমান বিশ্বে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি অত্যন্ত প্রয়াজেনীয়একটি প্রযুক্তি। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করি। আমাদের স্মার্টফোনে যে জিপিএস (GPS: Global
Positioning System) আছে, সেগুলো অসংখ্য স্যাটেলাইটের সিগনাল ব্যবহার করে কাজ করে। যখন আমরা
টেলিভিশনে কোনো অনুষ্ঠান দেখি সেগুলো অনেক সময় স্যাটেলাইট থেকে স¤প্রচার করা হয়। আমরা যখন দূর দেশে কথা
বলি অনেক সময়েই সেই কথাগুলো স্যাটেলাইটের ভেতর দিয়ে সেখানে যায়। যখন সমুদ্রে নিæচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত
হয়, আবহাওয়া স্যাটেলাইট তার নিখুঁত ছবি তুলে আমাদের সতর্ক করে দেয়। মহাকাশ গবেষণায় স্যাটেলাইট অনেক বড়
ভ‚মিকা রেখেছে, হাবল টেলিস্কোপে তোলা গ্রহ-নক্ষত্রের ছবি বিজ্ঞানের জগতে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছে।
তবে মহাকাশ অভিযানে প্রযুক্তিগত সমস্যা ছাড়াও মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যাও আছে, যেমন মহাকাশে বিভিন্ন উচ্চতায় অসংখ্য
পরিত্যক্ত এবং অকেজো মহাকাশযান কিংবা তাদের ভগ্নাংশ অচিন্তনীয় গতিবেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে যাচ্ছে। সেগুলোর
সঙ্গে অন্য মহাকাশযানের সংঘর্ষের আশঙ্কা এখন একটি বাস্তব সমস্যা। মহাকাশ অভিযান যে এখন শুধু মানুষের
কল্যাণের জন্য করা হয় সেটিও সত্যি নয়। অনেক দেশই নানা ধরনের গোপন সামরিক তথ্য সংগ্রহের জন্য স্যাটেলাইটগুলো
ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধবাজ দেশগুলো মহাকাশভিত্তিক সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে, যেটি
সমস্ত পৃথিবীকে একটি বড় বিপদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।