•• ••

বিশ্বগ্রাম (Global Village)

Posted on Nov 08, 2022 by Ikbal Ahmed
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বিশ্বগ্রাম (Global Village)

বিশ্বগ্রাম (Global Village) হচ্ছে এমন একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা যেখানে ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষই একটি সমাজে বসবাস করে এবং একে অপরকে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে থাকে। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ বলতে সাধারণত এমন একটি ধারণাকে বোঝানো হয় যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন পরস্পরের সাথে সহজ যাতায়াত ও ভ্রমণ, গণমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক যোগযোগের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এবং একক কমিউনিটি/সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর ব্যাপক ব্যবহার ও প্রভাবের কারণে আজ বিশ্বের কোনো এক দেশের এক প্রান্তের লোকজন অন্য প্রান্তের অন্য কোনো দেশের লোকের সাথে খুব সহজেইযোগাযোগ করতে পারছে। তথ্যের এ আদান প্রদান বিশ্বকে এতটাই কাছে নিয়ে এসেছে যে এটি এখন একটি গ্রাম বা ভিলেজ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ- বাংলাদেশে অবস্থানকারী কোনো ব্যক্তি এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তির সাথে তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন। টেলিফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটসহ কিছু ইলেকট্রনিক মাধ্যম এক্ষেত্রে দূরত্বের ব্যবধানটি ঘুচিয়ে দেয়। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজে আজকাল বিশ্বের একপ্রান্তের পোক অন্যপ্রান্তের লোকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আজকের বিশ্বে আমরা মূলত একটি বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজেই বসবাস করছি। যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসায়-বাণিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক উপাদান বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বগ্রামের বহুল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং বিশ্বগ্রাম শব্দটি দ্বারা বিশ্বব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ইন্টারনেটকে বুঝানো হয়ে থাকে। গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রামকে নিােক্তভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়-

  • অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায়ী- "বিশ্বকে বিবেচনা করা হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সন্মুক্ত সম্প্রদায়।” (The world is considered a single community by telecommunication)
  • উইকিপিডিয়ার উদ্ধৃতি অনুযায়ী- “বিশ্বগ্রাম হচ্ছে একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামো।” (The global village is the sociological and cultural structure.)

বিখ্যাত কানাডিয়ান দার্শনিক মার্শাল ম্যাকলুহান সর্বপ্রথম গ্লোবাল ভিলেজ কথাটি ব্যবহার করেন। ১৯৬২ সালে তার প্রকাশিত "The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man" এবং ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত "Understanding Media : The Extensions of Man" বই দুইটিতে সর্বপ্রথম বিশ্বগ্রাম শব্দটি ব্যবহার করেন। এই জন্যে তাকে বিশ্বগ্রামের জনক বলা হয়। ম্যাকলুহান ১৯১১ সালের ২১ জুলাই কানাডাতে জন্মগ্রহন করেন এবং ১৯৮০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মৃত্যবরণ করেন।

                                                                      চিত্রঃ মার্শাল ম্যাকলুহান ও তাঁর লেখা বিখ্যাত দুইটি বই

 

বিশ্বগ্রামের সুবিধাঃ

১. পুরো পৃথিবী মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। দূরত্বের ব্যবধান এখন আর কোনো বিষয় নয়। ২. তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ বর্তমানে গোটা বিশ্বের সাথে অতি সহজে যোগাযোগ করতে পারছে।

৩. ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের খবর অতি অল্প সময়ে নেয়া যাচ্ছে।

৪. আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এক দেশের লোক অন্য দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ ঘরে বসেই করতে পারছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করতে পারছে।

৫. ই- লার্নিং এর মাধ্যমে ঘরে বসেই বিশ্বের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসেবা গ্রহণ করতে পারছে।

৬. অনলাইনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারছে।

৭. টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে নিজ দেশে থেকেই বিশ্বের অন্য কোনো দেশের দক্ষ চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে।

৮. সাংস্কৃতিক তথ্যাদি বিনিময় করতে পারছে।

৯. বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হচ্ছে।

বিশ্বগ্রামের অসুবিধাঃ

১. ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাকিং এর মাধ্যমে গোপনীয় তথ্য চুরি হচ্ছে।

২. সাইবার আক্রমণ সংঘটিত হচ্ছে।

৩. ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরির মাধ্যমে ই-কমার্স পদ্ধতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে ।

৪. টরেন্ট বা ফাইল শেয়ার সাইটগুলোর মাধ্যমে কপিরাইটের বস্তুসমূহের বিতরণ ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

৫. পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

৬. মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে।